মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন

প্রার্থীদের একে-অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

কুমিল্লা প্রতিনিধি॥ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ১৪৭ জন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় নগরজুড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস-আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠছে নগরী। পথসভা, উঠান বৈঠক, পাড়ায় মহল্লায় গণসংযোগ, খন্ড খন্ড মিছিল আর মাইকিংয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনী উত্তাপ। প্রার্থীদের একে-অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের তীর ছুড়ছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছেন এসব প্রার্থী।

নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ৫ম দিনে মঙ্গলবার নগরীতে বেড়ে গেছে ভোটের উত্তাপ। প্রতিটি পাড়ায়-মহল্ললায় কোনো না কোনো প্রার্থীর পদচারণা রয়েছে অব্যাহত। প্রার্থীর গুণের বয়ানে আর  স্লোগানে মাইকিং চলছে নগরীর অলিগলিতে। মেয়র ও কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে একে-অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না। এক্ষেত্রে মেয়র প্রার্থীদের কেউ কেউ বেপরোয়া মন্তব্য করে আলোচনায় আসার চেষ্টা করছেন। প্রার্থীদের প্রচারণা ও গণসংযোগে ভিন্ন আমেজ যোগ করেছে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রচারণা। ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।

অন্যদিকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে মিছিল, মাইকিং, লিফলেট বিলির প্রচারণায় ভোটের মাঠের পরিবেশ মুখর হয়ে উঠেছে। তবে নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী এবং বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে প্রভাবশালী ৩ প্রার্থী নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটের মাঠে পুরোদমে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে নগরীর উন্নয়নে তার ১১ দফা অঙ্গীকার সংবলিত একটি প্রচারপত্র (লিফলেট) বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এসব অঙ্গীকারের মধ্যে আছে- সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করা, ভবনের নকশা অনুমোদনে সরকারি ফির বাইরে মেয়রকে এক টাকাও ঘুষ দিতে হবে না, বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদনে মেয়রকে বিনামূল্যে কোনো ফ্ল্যাট দিতে হবে না, ঠিকাদাররা কার্যাদেশ নিতে মেয়রকে পারসেনটেজ হিসেবে ঘুষ দিতে হবে না, সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে, নগরভবনকে দলীয় কার্যালয় বানানো হবে না, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন করা হবে, করের টাকা সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হবে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব পর্যায়ের উন্নয়ন

কর্মকান্ড পরিচালনা করা হবে, মেয়রের দরজা গণমানুষের জন্য সবসময় খোলা থাকবে এবং কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, উত্যক্ততা ও মাদকমুক্ত শান্তির কুমিলস্না গড়তে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের হাত শক্তিশালী করা।

এসব অঙ্গীকারের বিষয়ে মেয়র প্রার্থী রিফাত বলেন, ‘অতীতে নগর ভবনে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, সেগুলো দূর করতে চাই। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ ১১ দফা অঙ্গীকার ভোটারদের কাছে তুলে ধরেছি। পরবর্তী সময়ে নির্বাচনী ইশতেহারে নগরীর উন্নয়নে আরও যুক্ত করা হবে।’ মঙ্গলবার তিনি নগরীর বাদুরতলা, ঝাউতলা, কাপ্তান বাজার, মোগলটুলি, গাংচর, শ্রীভল্লবপুর ও কোটবাড়ি এলাকায় গণসংযোগ করেন।

সদ্য সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্রপ্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি) বলেন, ‘এ সিটির প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনে জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছিল। বিরোধী দলে থেকে আমি নির্বাচিত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছর বিরোধী দলের হয়েও এ সিটির অনেক উন্নয়ন করেছি, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনেও পদক্ষেপ নিয়েছি- নগরবাসী তা দেখেছে। সরকার নগরীকে আধুনিকায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য আশা করি এ নির্বাচনেও নগরবাসী আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।’ তিনি নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করাসহ এ সিটিকে উন্নত সিটিতে রূপান্তর করবেন বলে জানান।

মঙ্গলবার তিনি নগরীর কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, চকবাজার, সিটি মার্কেট, নজরুল এভিনিউ, লাকসাম রোড এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করেন।

তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাদকের সম্পৃক্ততাসহ নানা অভিযোগের বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে দেশব্যাপী বেশ আলোচিত-সমালোচিত। এ অবস্থায় ভোটের মাঠ গরম করার জন্য তিনি হঠাৎ আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের উদ্ভট অভিযোগ উত্থাপন করছেন, শালীনতার বাইরেও অনেক কথা বলছেন। তার এমন বক্তব্য নগরবাসীর কাছেও নেতিবাচক বলে মনে করি।’

প্রার্থীদের মধ্যে বয়সের দিক থেকে সর্বকনিষ্ঠ স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া) নির্বাচনী মাঠে বেশ তৎপর রয়েছেন। গত রোববার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সিইসির সঙ্গে প্রার্থীদের মতবিনিময় সভায় ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে এবং প্রহসনের নির্বাচনের কথা বললে সভাস্থলে তুমুল হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। তাকে ঘিরে সর্বত্র আলোচনার ঝড় ওঠে। তিনি প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়ে পথসভা ও গণসংযোগ করছেন। তিনি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে নগরীর রাজগঞ্জ, চকবাজার, শুভপুর, চৌয়ারা বাজার ও আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন। গণসংযোগকালে তিনি নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা, যানজট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ নগরীকে আধুনিক মানের করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com